এই গত কয়েক বছর আগে আমার চোখ খুললো নির্মাণ শিল্পের অন্ধকার দিকগুলোর ব্যপারে। ২০০৬ সালে, কিছু তরুণ কাতারী ছাত্র আমাকে অভিবাসী শ্রমিকদের ক্যাম্প দেখাতে নিয়ে গেছিল। আর তারপর থেকে আমি শ্রমিক অধিকারের প্রকাশিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দিয়েছি। গত ছয় মাসে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০০ এর বেশী গগনচুম্বি অট্টালিকার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে অথবা বাতিল করা হয়েছে। এই সব অট্টালিকার শিরণামের আড়ালে ঢাকা পড়ে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া নির্মাণ শ্রমিকদের ভাগ্য। এরকম ১১ লাখ শ্রমিক। মূলত ভারতীয়, পাকিস্তানি, শ্রিলংকান, এবং নেপালি, এইসব শ্রমিকেরা সবকিছুর ঝুঁকি নিয়ে দেশে তাদের পরিবারের জন্য পয়সা রোজগার করে। তারা ওই দেশে যাওয়ার জন্য একজন দালালকে হাজার হাজার ডলার দেয়। আর যখন তারা পৌঁছায়, তারা নিজেদেরকে লেবার ক্যাম্পে আবিষ্কার করে যেখানে কোন পানি নাই, শিতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নাই, এবং তাদের পাসপোর্টগুলো নিয়ে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সহজেই স্থানিয় অফিসের লোকজন এবং ঊর্ধতন কর্তিপক্ষের দিকে আঙ্গুল উঁচানো যায়, কিন্তু ৯৯ ভাগ শ্রমিক নিয়োগ করে বেসরকারি সংস্থাগুলো। আর তাই আমরা হয়ত আরও বেশি অথবা সমানভাবে, দায়বদ্ধ। বিল্ডসেফ ইউ.এ.ই এর মত সংগঠনগুলো তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যাগুলো আসলেই অবাক করার মত। আগস্ট ২০০৮ এ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অফিশিয়ালরা বলেন দেশের ১,০৯৮ টি লেবার ক্যাম্পের ৪০ শতাংশ ন্যূনতম স্বাস্থ্য ও অগ্নি নিরাপত্তা বিধি লংঘন করেছে। আর গত গৃষ্মে, ১০,০০০ এরও বেশি শ্রমিক বিক্ষোভ করেছে তাদের বেতন না দেওয়া, খাবারের জঘন্য মান, আর অপ্রতুল বাসস্থানের জন্য। আর তখনই অর্থনৈতিক পতন ঘটল। ঠিকাদারেরা যখন সর্বস্বান্ত হয়েছে, যেমন তারা আর সবার মত বাড়তি সুবিধা ভোগ করেছে, কিন্তু পার্থক্যটা হোল ওই শ্রমিকগুলোর সবকিছু হারিয়ে যায়, কাগজপত্র, পাসপোর্ট, দেশে ফেরার টিকেট, সব। বর্তমানে, এই মুহূর্তে, হাজার হাজার শ্রমিককে কাজ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দেশে ফেরার কোন উপায় নাই। এবং কোন পথ খোলা নাই, তাদের এখানে আসার কোন প্রমাণ নাই। এরাই হচ্ছে উত্থান-আর-পতনের উদ্বাস্তু। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন নির্মাণ পেশাজীবি হিসেবে, একজন স্থপতি হিসেবে, প্রকৌশলি, একজন ডেভেলপার হিসেবে, আপনি যদি জানেন যে এগুলো ঘটছে, কারণ আমরা প্রতি সপ্তাহে সাইটে যাচ্ছি, আপনি কি অপরাধবোধে ভোগেন নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যপারটা চোখেই পড়ে না? চলুন আমরা পরিবেশগত কর্মকান্ডের ব্যপারটা ভুলে যাই। বরং চলুন আমাদের নৈতিক কর্মকান্ডের কথা ভাবি। এর মধ্যে কী এমন মাহাত্য আছে যে আমরা জিরো-কার্বন, জ্বালানী সচেতন ইমারত বানাচ্ছি, এবং শ্রমিকেরা এই স্থপতিক নিদর্শণ তৈরি করছে যখন তা নিতান্তই অনৈতিক? ইদানিং আমাকে বলা হচ্ছে যে আমি নাকি অতিসচেতন পথে চলছি। কিন্তু, এই বিষয়ে সোজা ভাষায় বললে, এই অতিসচেতনতা ছাড়া আর কোন রাস্তা নাই। তো আসুন আমরা ভুলে না যাই, এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আসল খেসারত কারা দিচ্ছে। আর আমরা যেমন চিন্তায় থাকি আমাদের পরবর্তি চাকরির জন্য, পরবর্তি কোন ডিজাইনের কাজ পেতে পারি, আমাদের শ্রমিকদেরকে রাখার জন্য। আসুন আমরা ভুলে না যাই এই লোকগুলোর কথা, যারা আসলেই কাজ করতে গিয়ে মারা পড়ছে। ধন্যবাদ। (তালি)