(সুর)
১৯৪৩-এ নাৎসি জোটের একটি বিমান উড়ে যায়
নাৎসি জার্মানির উপর দিয়ে,
ফেলে যায় ১০ হাজারের মত ছাপানো
কাগজ নীচের মানুষের উপর।
অজ্ঞাতনামা জার্মানদের লেখা সেই কাগজগুলোয়
ছিলো হিটলারকে পরিত্যাগের আবেদন,
ভবিষ্যতের জন্য চরম লড়াই --
এবং কখনো আশা না ছাড়ার আকুতি।
তাদের এই আকুতি ছড়িয়ে পড়ে ঘরে ঘরে,
ব্যবসাবানিজ্যে --
এমনকি এই খবরটা পৌঁচ্ছে গেল
বন্দী-শিবির এবং জেলখানাগুলোতেও।
যুদ্ধ শেষ হবার পরই কেবলমাত্র এই অজ্ঞাতনামা
লেখকদের পরিচয়, গল্প,
এবং নির্মম পরিণতি আলোয় উঠে আসে।
এই ঘটনার ১০ বছর আগে
যখন হিটলার ক্ষমতা দখল করে নেয়,
হান্স এবং সোফি শল তখন
ফর্ক্টেনবাগ শহরে কিশোর-কিশোরী।
সে সময়ের ভয়, প্রচারণা, আর নজরদারি
শল পরিবার এবং তাদের মত
লাখো জার্মানদের সমগ্র জীবন
নাৎসিদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছিলো।
তখনকার সরকার বিশেষভাবে তরুণদের
দিকে নজর দেন,
নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে তাদের আচরণ
এবং চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণের জন্য।
কিশোর হিসেবে,
হান্স হিটলার ইয়ুথের সদস্য ছিলেন
আর সোফি যোগ দেন
"দা লীগ অফ জার্মান গার্লস"-এ।
হান্স দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন
এবং অন্য ছেলেদের প্রশিক্ষণ ও দীক্ষা দেয়া
তদারকির দায়িত্ব পান।
১৯৩৬-এ তাকে একটি জাতীয় সমাবেশে
পতাকা বহনের দায়িত্ব দেয়া হয়।
কিন্তু যখন তিনি নাৎসিদের
আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন,
তিনি প্রশ্ন করতে শুরু করেন।
একইসময়ে, সোফিও তার চারপাশে দেখা তথ্য
নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেন।
তাদের মা-বাবা রবার্ট এবং ম্যাগডালিনা,
যারা ভয় পাচ্ছিলেন নাৎসি মতবাদের
কাছে সন্তান হারানোর,
তারা উৎসাহ দেন তাদের এই সন্দেহকে।
বাড়িতে, রবার্ট এবং ম্যাগডালিনা
ভিনদেশি রেডিও স্টেশন শুনত,
যেগুলো সরকার শুনতে নিরুৎসাহিত করছিলো প্রথমে
এবং পরে নিষিদ্ধ করে দেয়।
যখন জাতীয় সম্প্রচারে সরকার অবলীলায়
নাৎসি বাহিনীর নৃশংসতাকে বাদ দিয়ে যাচ্ছিলো,
শল পরিবার তখন নির্মম সত্য জানতে পারে।
এতকিছুর পর তবুও তাদের হিটলারের জার্মানির
নিয়মের নীচেই জীবনযাপন করতে হয়।
যুদ্ধ শুরুর পর,
সোফি অনিচ্ছা সত্বেও জাতীয় স্বার্থে
কাজ শুরু করেন,
এবং হান্সকে সেনা হবার দায়িত্ব নিতে হয়
মিউনিখে মেডিকেল স্কুলে যাওয়ার সাথে সাথে।
যেখানে হান্সের দেখা হয় ক্রিস্টোফ প্রোব্স্ট,
উইলি গ্রাফ ও আলেক্সান্ডার স্মোরেলের সাথে।
দিনের পর দিন, তাদের নাৎসি মতবাদের
প্রতি ঘৃনা বাড়তে থাকে।
তারা চাইছিলেন তাদের
ভাবনা মানুষকে জানাতে।
কিন্তু যে পরিস্থিতিতে কাউকে বিশ্বাসই
করা যায়না, তারা কিভাবে এই কাজটি করতেন?
অতএব তিন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলো
পরিচয় গোপন রেখে বিদ্রোহের।
তিনজন নিজেদের টাকা একত্রিত করে
ছাপানোর জিনিসপত্র কেনে।
এক পরিচিত তাদের নিজের স্টুডিওর
নীচের কুঠুরি ব্যবহার করতে দেয়।
গোপনে তারা নিজেদের বার্তার খসড়া
তৈরি করতে থাকে।
১৯৪২-এর জুনে পুরো মিউনিখে রহস্যজনক
নাৎসিবিরোধী লিফলেট ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
লিফলেটগুলি “দ্য হোয়াইট রোজ" নামে
সাক্ষরিত ছিলো।
প্রথম লিফলেটটিতে ছিলো হিটলারের সমালোচনা
এবং জার্মানদের প্রতি, যুদ্ধের
প্রচেষ্টা নস্যাৎ-এর আহবান।
"নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলো...
এই নিরিশ্বরবাদী যুদ্ধের চাকা থামিয়ে দাও
খুব দেরি হবার আগে,
এই নগরী পাথরের স্তূপ হবার আগে...
আমাদের দেশের শেষ তরুণটির
রক্ত ঝরে শেষ হবার আগে...
এটা ভুলোনা যে প্রত্যেক মানুষ সে
সরকারই পায় যা সে পাবার যোগ্য !"
সেসময় যখন একটি মজা করে বলা
কথাও বিশ্বাসঘাতকতার তকমা পেতো,
সেখানে এই লিফলেটের ভাষা ছিলো অভূতপূর্ব।
লিফলেটটি মূলত লিখেছিলেন হান্স শল।
১৯৪২-এ সোফিও মিউনিখে আসেন তার
ভাইয়ের এই কাজ সম্পর্কে কিছু না জেনেই।
তবে জলদিই স্কুলে লিফলেটের দেখা
পান তিনি।
কিন্তু হান্সের রুমে
প্রমাণ পাওয়ার আগ পর্যন্ত
তিনি জানতেন না এটা কে লিখেছে।
এই ধাক্কা সামলানোর আগেই সোফি
সিদ্ধান্ত নেন ভাইয়ের দলে যুক্ত হবার।
দুজনের জন্যই, এটা সময় ছিলো সেই রাগকে
ছড়িয়ে দেয়ার যা তাদের মধ্যে বহুবছর ধরে ছিলো।
১৯৪২-এর জুন থকে ১৯৪৩-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
চারজনের দলটি অবিরাম কাজ করে।
গেস্টাপো যখন দলটিকে খুঁজছিলো,
“দ্য হোয়াইট রোজ" তখন সর্বদা সতর্ক ছিলো।
যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। আইন কড়া হয়,
আর মিউনিখে শুরু হয় বিমানাক্রমণ।
কিন্তু হোয়াইট রোজ
আরো গভীর উদ্যোগে যায়।
তারা দালান ও গেস্টাপোভর্তি ট্রেনেও
দেয়ালচিত্র এঁকে দেয়।
১৯৪২-এর শীতে,
হান্স চেকোস্লোভাকিয়ার বর্ডারে
একটি অভিযানে যান
নাৎসিবিরোধী মতবাদীদের সাথে দেখা করতে।
১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩-এ,
সোফি এবং হান্স একটি লিফলেট ভর্তি স্যুটকেস
নিয়ে তাদের বিশ্ব্যবিদ্যালয়ে আসেন।
এক জিম্মাদার তাদের কাজকর্ম লক্ষ করে
এবং গেস্টাপোকে জানায়।
দুজনই শান্তভাবে তাদের জড়িত
থাকার কথা অস্বীকার করেন
যতক্ষণ না পুলিশ সব লিফলেট এক করে
খালি স্যুটকেসে রাখে,
এবং সেখানে সব লিফলেট ঠিকমত এঁটে যায়।
এরপর যখন হান্স আর সোফি স্বীকার করেন,
তাদেরকে সাথে সাথে আদালতে পাঠানো হয় এবং
শিরচ্ছেদ করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
তবে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের পরও দুজনই তাদের
সহযোগীদের নাম বলতে অস্বীকৃতি জানায়।
শিরচ্ছেদের আগে সোফি নিজের দেশের
অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একইসাথে তিনি ভবিষ্যতের জন্য
আশাবাদও ব্যক্ত করে যানঃ
"আমরা কিভাবে ন্যায় আশা করি
যেখানে বলতে গেলে কেউই
ন্যায়ের জন্য আত্মত্যাগ করতে রাজি নয়?
এত সুন্দর রোদেলা দিন আর আমাকে যেতে হচ্ছে,
কিন্তু আমার মৃত্যুতে কি আসে যায়
যদি আমাদের কারণে
আরো হাজার মানুষ জাগ্রত হয়
আর পদক্ষেপ নেয় ?"